- Joined
- May 29, 2025
- Messages
- 135
- Reaction score
- 0
মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (রহঃ) পর্ব ১
✍ ড. নূরুল ইসলাম
✍ ড. নূরুল ইসলাম
ভূমিকা : মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী ভারতীয় উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আহলেহাদীছ আলেম, মুফাসসিরে কুরআন, মুহাদ্দিছ, ফক্বীহ, মুনাযির (তার্কিক), বাগ্মী, সাংবাদিক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও সুদক্ষ অনুবাদক। উপমহাদেশে আহলেহাদীছ মাসলাকের প্রতিরক্ষায় তিনি এক অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন। তাক্বলীদের বেড়াজালে আবেষ্টিত মুসলিম সমাজ থেকে শিরক-বিদ‘আত ও মাযহাবী গোঁড়ামি বিদূরিতকরণে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী ছিল দারুণ কার্যকর। তাঁর সম্পাদিত ‘আখবারে মুহাম্মাদী’ পত্রিকা সমাজ সংস্কারে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় দেড়শ’। তাফসীর ইবনে কাছীর ও হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়্যাহ (রহঃ)-এর অমর গ্রন্থ ‘ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন’-এর উর্দূ অনুবাদ এবং পাঁচ খন্ডে সমাপ্ত ‘খুৎবাতে মুহাম্মাদী’ তাঁর এক অনন্য ইলমী অবদান। নিম্নে তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হল-
জন্ম ও বংশ পরিচয় : মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী বর্তমান গুজরাট (সাবেক মুম্বাই) প্রদেশের কাঠিয়াওয়াড় (বর্তমানে সও রাষ্ট্র) যেলার জুনাগড় শহরে ১৩০৭ হিঃ/১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মাদ ইবরাহীম ধনাঢ্য ফল ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতার নাম বিবি হাওয়া। পিতা-মাতা দু’জনই বিখ্যাত মায়মান (প্রচলিত মেমন) বংশোদ্ভূত ছিলেন।[1] উল্লেখ্য যে, মায়মান সম্প্রদায় মূলতঃ সিন্ধুর অধিবাসী ছিল। সাইয়িদ ইউসুফুদ্দীন নামক জনৈক মুবাল্লিগের হাতে এরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর বাগদাদ থেকে ১৪২২ খ্রিষ্টাব্দে সিন্ধুতে আসেন। তাঁর দশ বছরের অবিশ্রান্ত দাওয়াতের ফলে ‘লোহানা’ (Lohana) গোত্রের ৭০০ পরিবার ইসলাম গ্রহণ করে।[2] গুজরাট বিজয়ী মোগল বাদশাহ আকবরের পূর্বে আহমদাবাদের মুযাফফর শাহী যুগে মায়মান সম্প্রদায় সিন্ধু থেকে কাঠিয়াওয়াড়ে স্থানান্তরিত হয়। উক্ত লোহানা গোত্রেরই একটি শাখা মায়মান।[3]
জুনাগড়ীর পিতা নিজেকে মুহাম্মাদী তথা আহলেহাদীছ হিসাবে পরিচয় দিতে পসন্দ করতেন। এজন্য মুরববী ও আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকে তাঁকে নানাবিধ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তার ঔরসে তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এরা হলেন ইসমাঈল, আয়েশা খাতুন, মুহাম্মাদ এবং আব্দুস সোবহান।[4]
প্রাথমিক শিক্ষা ও বিবাহ : জুনাগড়ীর স্বীয় জন্মভূমি জুনাগড়ে আহলেহাদীছ আলেম আব্দুল্লাহ জুনাগড়ীর নিকট প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন।[5] যৌবনে পদার্পণ করা মাত্রই আমেনা নামে এক পুণ্যবতী মহিলার সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর মধ্যে পড়াশোনার ব্যাপারে কোন আগ্রহ না দেখে পিতা তাঁকে আতর বিক্রির ব্যবসায় নিয়োজিত করেন। তিনি অত্যন্ত সফলতার সাথে এ ব্যবসা চালিয়ে যান। বিয়ের পর স্ত্রীর কোলজুড়ে এক ফুটফুটে শিশুর জন্ম হয়। কিন্তু জন্মের কিছুদিন পরেই দাম্পত্য জীবনের প্রথম ফসলের মৃত্যু ঘটে। এরপর দ্বিতীয় সন্তান জন্মদানের সময় প্রিয়তমা স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। জীবনসঙ্গিনীর আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন। সদ্য পরলোকগত স্ত্রীর মধুর স্মৃতি তাঁর মানসপটে জ্বলজ্বল ছিল। তিনি তাকে কোনমতেই ভুলতে পারছিলেন না। স্ত্রীর চিন্তায় সবসময় মনমরা হয়ে থাকতেন। এজন্য তাঁকে পরিবারের সদস্যদের টিটকারি ও ভ্রুকুটি সহ্য করতে হত।[6]
জ্ঞানান্বেষণে দিল্লীর পানে : দুর্বিষহ এই মানসিক অবস্থায় জুনাগড়ে মোটেই তাঁর মন বসছিল না। উপরন্তু বাল্য শিক্ষক আব্দুল্লাহ জুনাগড়ীর নিকট থেকে দিল্লীতে উচ্চশিক্ষার বিবরণ শুনে তিনি সেখানে যাওয়ার জন্য স্বপ্নের জাল বুনতে থাকেন। কিন্তু পিতা এতে মোটেই সম্মত হচ্ছিলেন না। জুনাগড়ীও তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। এজন্য যিদ ধরলে পিতা তাঁকে খরচ না দেয়ার ধমকি দেন। অবশেষে পরিবার-পরিজন ও জন্মভূমির মায়া ত্যাগ এবং সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উচ্চশিক্ষার উদগ্র বাসনায় তিনি বন্ধু আব্দুস সালামের[7] সাথে ১৯১৩ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে একদিন সকালে সংগোপনে দিল্লীর পানে যাত্রা করেন। সেখানে গিয়ে তিনি ‘মাদরাসা আমীনিয়া’তে ভর্তি হন এবং গভীর মনোযোগ সহকারে জ্ঞানচর্চার ব্রতী হন। এটি দেওবন্দীদের প্রতিষ্ঠিত একটি কট্টর হানাফী মাদরাসা ছিল। স্বাধীন চিন্তা-চেতনা পোষণ এবং ইজতিহাদের কোন জায়গা সেখানে ছিল না। বরং আপাদমস্তক তাক্বলীদে শাখছীর জরাগ্রস্ততায় জর্জরিত ছিল। তাই আহলেহাদীছ হওয়ার কারণে তাঁকে মাদরাসা থেকে বের করে দেয়া হয়।[8]
ঐদিন ফতেহপুরী মসজিদে তিনি মাগরিবের ছালাত আদায় করেন। ছালাতে তিনি এবং আরেকজন মুছল্লী সশব্দে আমীন বলেন। ছালাত শেষে তাঁর সাথে আলাপচারিতায় মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী (১৮৬৬-১৯৩৩) প্রতিষ্ঠিত দারুল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ মাদরাসার সন্ধান পান। সেখানে ভর্তি হয়ে তিনি নিবিষ্টচিত্তে নাহু, ছরফ, তাফসীর ও হাদীছের বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন এবং ফারেগ হন। পাশাপাশি দিল্লীর ফাটক হাবাশ খাঁ মাদরাসায় মিয়াঁ নাযীর হুসাইন মুহাদ্দিছ দেহলভীর (১৮০৫-১৯০২) খ্যাতিমান ছাত্র, প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ মাওলানা আব্দুর রহীম গযনভী অমৃতসরী (মৃঃ ১৩৪২ হিঃ) ও মাওলানা আব্দুর রশীদের কাছে হাদীছের কতিপয় গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। তাছাড়া দিল্লীর প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক দেহলভী মানতেকী এবং মাওলানা মুহাম্মাদ আইয়ূব পারেচার নিকট মানতেক, দর্শন, মুনাযারার মূলনীতি অধ্যয়ন করেন এবং এসব বিষয়ে পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেন।[9]
মাদরাসা প্রতিষ্ঠা : লেখাপড়া শেষ করার পর মাওলানা জুনাগড়ী দিল্লীর আজমিরী গেট সন্নিকটস্থ আহলেহাদীছ মসজিদে পাঠদান শুরু করেন। এখানে তিনি ‘মাদরাসা মুহাম্মাদিয়াহ’ প্রতিষ্ঠা করেন। আমৃত্যু সুদীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ তিনি এ দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের কুরআন ও হাদীছের দরস প্রদান করেন। অল্পদিনের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির খ্যাতি দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিভিন্ন জায়গার ছাত্ররা এখানে এসে তাদের জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রিয় ছাত্র মাওলানা সাইয়িদ তাকরীয আহমাদ সাহসোয়ানী এবং মাওলানা আব্দুর রশীদ এখানে দরসের সিলসিলা অব্যাহত রাখেন।[10]
পত্রিকা প্রকাশ : মাদরাসা মুহাম্মাদিয়ায় পাঠদানের পাশাপাশি মাওলানা জুনাগড়ী দ্বীনে হকের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে ‘গুলদাস্তায়ে মুহাম্মাদিয়া’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। অল্প সময়ের মধ্যে পত্রিকাটি দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ১৩৪০হিঃ/১৯২১ সাল থেকে ‘আখবারে মুহাম্মাদী’ নামে প্রত্যেক আরবী মাসের ১৫ তারিখে পাক্ষিক হিসাবে প্রকাশিত হতে থাকে। ১৬ পৃষ্ঠার এ পত্রিকাটি দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ তাওহীদ ও সুন্নাতের প্রচার ও প্রসারে এবং শিরক ও বিদ‘আত-এর মূলোৎপাটনে দিশারীর ভূমিকা পালন করে। এতে আহলেহাদীছদের আক্বীদা ও আমল সম্পর্কে মাযহাবীদের সমালোচনা এবং ইসলাম সম্পর্কে বিধর্মীদের অভিযোগ সমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হত। সমাজ সংস্কারে এ পত্রিকাটির অবদান অতুলনীয়।
মাওলানা জুনাগড়ী আমৃত্যু এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি দক্ষ হাতে বৈদগ্ধ ও একাগ্রতার সাথে আমৃত্যু এর সম্পাদনায় নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণে ১৯৪১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী সংখ্যা বের হওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪১ সালের ১৫ই জুন থেকে তাঁর সুযোগ্য ছাত্র মাওলানা সাইয়িদ তাকরীয আহমাদ সাহসোয়ানীর সম্পাদনায় পুনরায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। কাগজের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে ১৯৪৬ সালে আবার বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চালু হয়। কয়েক মাস চালু থাকার পর চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।[11]
দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লীর সাথে জুনাগড়ীর সম্পর্ক : দারুল হাদীছ রহমানিয়া, দিল্লীর সাথে মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ীর গভীর সম্পর্ক ছিল। মাদরাসার অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা সেখানকার শিক্ষকরাই নিতেন। তাঁদের সাথে মাওলানা জুনাগড়ীও কখনো কখনো শরীক হতেন। মাদরাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শেখ আতাউর রহমান প্রত্যেক সপ্তাহে জুম‘আর ছালাতের পরপরই মাদরাসায় গাড়ী (প্রাইভেট কার) পাঠাতেন। মাদরাসার সব শিক্ষক সেই গাড়ীতে চড়ে তাঁর বাড়ীতে দাওয়াত খেতে যেতেন। মাওলানা জুনাগড়ীও সম্মানিত মেহমান হিসাবে সেখানে উপস্থিত থাকতেন। আতাউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর মেজো ছেলে শেখ আব্দুল ওয়াহ্হাব-এর স্কন্ধে মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। তখনও এ নিয়ম জারী ছিল। তবে মাওলানা জুনাগড়ী সে সময় তাঁর বাড়ীতে উপস্থিত হতেন না। তাঁর খাবার তাঁর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়া হত।
রহমানিয়া মাদরাসার নিয়ম-নীতি অত্যন্ত কঠোর ছিল। ফলে নিয়ম ভঙ্গকারী বহিষ্কৃত ছাত্রদের শেষ আশ্রয়স্থল হতেন মাওলানা জুনাগড়ী। তিনি তাঁর পত্রিকা অফিস সংলগ্ন রুমে তাদের খানাপিনার আয়োজন করতেন এবং তাদেরকে এত সুন্দরভাবে পাঠদান করতেন যেন মাদরাসার পরবর্তী পরীক্ষায় তারা অংশগ্রহণ করতে পারে।[12]
দাওয়াত ও তাবলীগ : ‘খতীবে হিন্দ’ খ্যাত[13] মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানে এক সাহসী মর্দে মুজাহিদ ছিলেন। নির্ভীকচিত্তে তিনি কুরআন-সুন্নাহর দাওয়াত জনসমাজে ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। এক্ষেত্রে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তিনি বিন্দুমাত্র পরোয়া করতেন না। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, ইউপি, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও কলকাতা ছিল তাঁর দাওয়াতের ক্ষেত্র। এসব অঞ্চলের বার্ষিক জালসাসমূহে উপস্থিত হয়ে তিনি মানুষকে তাওহীদ ও ইত্তেবায়ে সুন্নাতের দাওয়াত দিতেন।[14] তিনি আজমিরী গেটের নিকটস্থ আহলেহাদীছ মসজিদে জুম‘আর খুৎবা দিতেন। ওয়ায-নছীহতের জন্য নিকট দূরের সভা-সমিতিতে অংশগ্রহণ করতেন। তাঁর মোহনীয় বাচনভঙ্গি, অগ্নিঝরা বক্তৃতা ও হৃদয়োৎসরিত দরদমাখা নছীহত শ্রোতাদের হৃদয়জগতে গভীর প্রভাব বিস্তার করত। কুরআন ও সুন্নাহর আকর্ষণীয় বর্ণনা সমূহ, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ), ইসলামের ইতিহাস, ফের্কাবন্দী, তাক্বলীদ ও মাযহাবী গোঁড়ামির পরিণতি, তাওহীদ, ইত্তেবায়ে সুন্নাত, সালাফে ছালেহীনের জীবনের শিক্ষণীয় ঘটনা প্রভৃতি ছিল তাঁর বক্তব্যের বিষয়বস্ত্ত। সমকালীন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে এসব বিষয় উপস্থাপনে তিনি অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত ছিলেন।[15]
মাওলানা মুহাম্মাদ দাঊদ রায লিখেছেন, ‘গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা ছাড়া তিনি বাগ্মিতার ময়দানেও এক খ্যাতিমান সৈনিক ছিলেন। বাগ্মিতাশক্তির অবস্থা এই ছিল যে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তব্য পেশ করতেন এবং ক্লান্তির কোন লেশমাত্র থাকত না। তাওহীদ ও সুন্নাত বিষয়ে তাঁর বক্তব্যগুলি এমন হৃদয়গ্রাহী হত যে, শ্রোতামন্ডলী গভীর মনোযোগ সহকারে তা শ্রবণ করত। সর্বপ্রথম তিনি দিল্লীর আহলেহাদীছ কনফারেন্সের অধিবেশনে চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। জোরালো বক্তৃতা ও তারুণ্যের উদ্যমের নিদর্শন এই ছিল যে, তার ওযনের ভারে দুই তিনটি চেয়ার ভেঙ্গে যায়। অতঃপর বক্তৃতার ময়দানে এতটা প্রসিদ্ধ হন যে, দেশের পূর্ব-পশ্চিম যেখানেই কোন সাধারণ তাবলীগী জালসাও হত, শ্রোতামন্ডলী অবশ্যই তাঁর শুভাগমনের প্রতীক্ষায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত’।
তিনি আরো লিখেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও স্ত্ততি এবং তাঁর প্রিয় রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম তাঁর বক্তৃতা সমূহের ভূষণ ছিল। স্টেজ বা মিম্বরে আগমন করা মাত্রই মাসনূন খুৎবার পর আল্লাহ তা‘আলার হামদ ও ছানার জন্য এমন ঈমানোদ্দীপক এবং আকর্ষণীয় বাক্য বলতেন যে, শ্রোতারা তন্ময় হয়ে তা শুনত। স্বয়ং তাঁর নিজের উপর সে সময় আল্লাহপ্রেমে দেওয়ানা হওয়ার যে অবস্থা সৃষ্টি হত, তা কাগজের পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তিনি আল্লাহপ্রেমে আত্মহারা হয়ে যেতেন এবং এমতাবস্থায় এমন সুন্দর সুন্দর শব্দগুচ্ছ মুখ থেকে নির্গত হত যেগুলিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহামকৃত বলাই যুক্তিযুক্ত। ভারত ও পাকিস্তানের এমন হাযার হাযার মুসলমান এখনও জীবিত রয়েছে, যারা তাঁর জালসায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল’।[16]
মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ, হিন্দ-এর সাবেক আমীর মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী বলেন, ‘খতীবে হিন্দ মুহাদ্দিছ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ীকে আল্লাহ তা‘আলা বক্তৃতার এমন যোগ্যতা ও ক্ষমতা দান করেছিলেন যে, তিনি সব বিষয়ে অত্যন্ত সারগর্ভ, প্রামাণ্য ও প্রভাববিস্তারকারী বক্তব্য দিতেন। তাঁর কণ্ঠে এমন আকর্ষণ ও প্রভাব ছিল যে, মাসনূন খুৎবা শুরু করা মাত্রই শ্রোতাদের মনে ভাবাবেশের সৃষ্টি হত এবং অনেকে নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে অঝোর নয়নে ক্রন্দন করত। তাঁর খুৎবায় প্রভাবিত হয়ে কতজন যে প্রকাশ্যে তওবা করত তার ইয়ত্তা নেই। তাঁর ওয়ায ও তাওহীদী বক্তৃতা হিন্দুস্তানে তাক্বলীদ এবং শিরক ও বিদ‘আতের তখতে তাউস উল্টিয়ে দিয়েছে। হাযার হাযার ব্যক্তি শিরক ও বিদ‘আত থেকে তওবা করে প্রকৃত তাওহীদবাদী ও সুন্নাতের অনুসারী হয়ে গেছে। তাঁর নূরানী চেহারা ও আকার-আকৃতি এমন ঈমানদীপ্ত ও পসন্দনীয় ছিল যে, তার উপর যার দৃষ্টি পড়ত সেই আমূল পরিবর্তিত ও তাঁর ভক্ত হয়ে যেত। উপরন্তু হাদীছের প্রতি তাঁর আমল এবং ইত্তেবায়ে সুন্নাতের জাযবা স্বর্ণের উপর কারুকার্যের মতো কাজে দিত’।[17]
প্রফেসর হাকীম এনায়াতুল্লাহ নাসীম সোহদারাভী বলেন, ‘মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ীর সাথে আমার প্রায়ই সাক্ষাৎ হত। তিনি অত্যন্ত তীক্ষ্ণধীশক্তিসম্পন্ন আলেম ছিলেন। সূক্ষ্মভাবে মাসআলা তাহক্বীক্বে তাঁর অপরিসীম যোগ্যতা ছিল। তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত সারগর্ভ ও প্রভাব বিস্তারকারী হত। শ্রোতারা অত্যন্ত আগ্রহ ভরে তাঁর বক্তব্য শুনত এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করতে বদ্ধপরিকর হত’।[18]
মাওলানা জুনাগড়ী বক্তব্য দেয়ার সময় বিদ‘আতীদেরকে মোটেই তোয়াক্কা করতেন না। তাওহীদী রোশনীতে আলোকিত হৃদয়ের গভীর থেকে নিঃসৃত তাঁর অগ্নিঝরা বক্তৃতা বিরোধীদের দেহমনে আগুন ধরিয়ে দিত। একবার টিটাগড়-এর নিকটবর্তী ‘আঙ্গারা’ নামক গ্রামে একটি জালসায় তিনি অগ্নিঝরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। তাঁর বক্তব্য শুনে মুক্বাল্লিদদের একটি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কলকাতা আদালতে ধর্ম অবমাননার মামলা দায়ের করে। এ মামলা দায়েরের অন্যতম একটা কারণ ছিল তাঁর রচিত ‘দুর্রায়ে মুহাম্মাদী’ (মুহাম্মাদী চাবুক) নামক লাজওয়াব গ্রন্থটি। বিরোধীরা শুধু মামলা দায়ের করেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং দিল্লীতে অবস্থিত ‘আখবারে মুহাম্মাদী’ পত্রিকা অফিস থেকে এর সকল কপি উধাও করে দেয়ারও প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালায়। সৌভাগ্যক্রমে কিছু কপি তাদের হিংস্র থাবা থেকে বেঁচে যায়। যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সংস্করণগুলি বের হয়। তাদের চাপে ইংরেজ সরকার গ্রন্থটি বাজেয়াপ্ত করলেও পরবর্তীতে হাযার হাযার কপি মুদ্রিত হয়ে জনগণের হাতে হাতে চলে যায়।
এ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে বিরোধী পক্ষের উকিল ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩)। মামলায় হাযিরা দেয়ার জন্য মাওলানা জুনাগড়ীকে নির্ধারিত তারিখের পূর্বেই কলকাতায় রওয়ানা দিতে হত। তখনকার দিনের যাতায়াত ব্যবস্থাও ছিল অনুন্নত। ফলে বহু কষ্ট স্বীকার করে তিনি আদালতে উপস্থিত হতেন। তাঁকে সাহস যোগানোর জন্য বন্ধু মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী (১৮৬৮-১৯৪৮) অনেক সময় অমৃতসর থেকে কলকাতা হাইকোর্টে আসতেন। মামলার শেষ দিকে জুনাগড়ী কলকাতার একটি হোটেলে অবস্থান করতেন। একদিন হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় মাযহাবীরা তাঁর উপর বোতল বোম নিক্ষেপ করে। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? আল্লাহর অশেষ কৃপায় তিনি সেই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান। অবশেষে মামলার রায় তাঁর পক্ষেই যায়।[19]
১৯২৯ সালে এ মামলাটি দায়ের করা হয় এবং ১৯৩০ সালে শেষ হয়।[20] মামলায় নিষ্কৃতি পেয়ে প্রথমে তিনি জজ আদালতের অতঃপর বিচারকের গাড়িতে চড়ে স্টেশনে পৌঁছেন। অতঃপর দারভাঙ্গার লাহেরিয়া সোরাই নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। সেখানে তিনি ডা. ফরীদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। ডাক্তার ছাহেব তাঁর সম্মানে এক জাঁকজমকপূর্ণ জালসার আয়োজন করেন। এতে মাওলানা অমৃতসরীও উপস্থিত ছিলেন। মামলার রায় শোনার জন্য তিনিও কলকাতা গিয়েছিলেন।
মাওলানা জুনাগড়ীর বক্তব্যের প্রিয় বিষয় ছিল তাক্বলীদে শাখছী। এ সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি যখন কুরআন মাজীদের আয়াত তেলাওয়াত করতেন তখন শ্রোতারা ঘুণাক্ষরেও টের পেত না যে, এর সাথে তাক্বলীদের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু যখন আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুরু করতেন এবং তাক্বলীদে শাখছীর সাথে তার সম্পর্ক বর্ণনা করতেন, তখন তারা তাজ্জব বনে যেত। দারভাঙ্গার উক্ত জালসায় ডা. ফরীদ তাঁর জন্য বক্তব্যের একটি বিষয় নির্ধারণ করে দেন। যার সাথে তাক্বলীদে শাখছীর দূরতম সম্পর্কও ছিল না। কিন্তু তিনি সেই বিষয়বস্ত্তর উপর আলোচনা করতে গিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাক্বলীদ-এর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। এতে সবাই তাঁর তীক্ষ্মবুদ্ধি ও অন্তর্দৃষ্টির প্রশংসা করে।[21]
বাহাছ-মুনাযারা : মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী একজন প্রসিদ্ধ ও অভিজ্ঞ মুনাযির (তার্কিক) ছিলেন। তিনি বহু মুনাযারায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ের মাল্যে ভূষিত হয়েছেন। শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করার পর তিনি মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভীর ছাত্র হাফেয মাওলানা এনায়াতুল্লাহ ওয়াযীরাবাদীর সাথে দিল্লীর সদর বাজারে অবস্থিত কালাঁ (বড়) মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত এক বাহাছে বিজয়ী হন।[22]
১৯১৬ সালে রাজস্থানের খান্ডেলায় মাওলানা আব্দুল জববার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক জালসা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দিল্লী থেকে মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব মুহাদ্দিছ দেহলভী, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আটাবী, মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী এবং মাওলানা শরফুদ্দীন অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা অত্যন্ত চমৎকার ও ফলপ্রসূ হয়। তাদের দলীলসমৃদ্ধ বক্তব্য শ্রবণ করে কয়েকজন হানাফী আহলেহাদীছ হয়ে যান।
এর কিছুদিন পর হানাফী আলেম আব্দুল আযীয সেখানে গিয়ে আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। তিনি আহলেহাদীছদের সাথে মুনাযারা করারও ঘোষণা দেন। ১৪ই শাওয়াল মুনাযারার দিন নির্ধারিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে হানাফী পক্ষ থেকে মাওলানা আহমাদ সাঈদ দেহলভী ও অন্য পাঁচজন আলেম এবং আহলেহাদীছ পক্ষ থেকে মাওলানা আব্দুল হাকীম নাছিরাবাদী (শিক্ষক, মাদরাসা হক্কানী), মাওলানা আহমাদুল্লাহ (শিক্ষক, মাদরাসা হাজী আলী জান, দিল্লী), মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী ও মাওলানা আব্দুল গণী বেলা আড়াইটায় মুনায়ারার ময়দানে উপস্থিত হন। হানাফীদের পক্ষ থেকে মাওলানা আব্দুল আযীয বক্তব্য পেশ করেন। জুনাগড়ী তার বক্তব্যের জওয়াব দেন। বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত বিতর্ক চলে। আছরের ছালাতের পর মাওলানা আহমাদ সাঈদ দেহলভী ও মাওলানা আব্দুল হাকীম-এর মাঝে রাফ‘উল ইয়াদায়েন ও সশব্দে আমীন বলার বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দেহলভী বলেন, যদি কুতুবে সিত্তাহ থেকে এমন কোন ছহীহ হাদীছ পেশ করা হয় যার মাধ্যমে সর্বদা রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সাব্যস্ত হয়, তাহলে আমি মেনে নিব। মাওলানা আব্দুল হাকীম ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদীছটি পেশ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন উভয় হাত তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং যখন রুকূ হ’তে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন’।[23]
এছাড়া তিনি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর আরেকটি রেওয়ায়াত, মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ (মুসলিম হা/৮৬৫), আবু হুমাইদ আস-সায়েদী (বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২) প্রমুখ বর্ণিত হাদীছ সমূহ পেশ করে বলেন, দেখুন! এই হাদীছগুলিতে كان ও إذا শব্দ রয়েছে, যা স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতার ফায়েদা দেয়। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন ছহীহ বর্ণনা দ্বারা সারাজীবনে একবারও রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করা সাব্যস্ত নেই। মাওলানা আহমাদ সাঈদ দেহলভী বলেন, যথার্থই তাই। আমিও এটাকে সুন্নাত মনে করি এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সাব্যস্ত মানি। এভাবে আহলেহাদীছদের বিজয়ের মাধ্যমে মুনাযারার পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল লতীফ খান্ডেলার বর্ণনামতে ঐদিন সন্ধ্যাবেলায় তাদের মসজিদে ১৮ জন হানাফী আহলেহাদীছ হয়ে যান।[24]
রবীউল আউয়াল ১৩৪২ হিজরী মোতাবেক ১৯২২ সালে পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুর যেলার ‘আওয়ান’ নামক গ্রামে এক ঐতিহাসিক বাহাছ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত গ্রামে মৌলভী নিযামুদ্দীন ওরফে মোল্লা মুলতানী নামে এক হানাফী আলেম ছিলেন। তিনি আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে সর্বদা বিষোদগার করতেন এবং তাদেরকে গালি-গালাজ করতেন। মুহাম্মাদ হাসান খান ছাহেব নামক এক ব্যবসায়ী অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মুনাযারায় বসার আমন্ত্রণ জানান। এ লক্ষ্যে খান ছাহেব মাদরাসা ইসলামিয়া, খানপুরের সেক্রেটারী আব্দুল গণীকে দিল্লী পাঠান। তিনি মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ীকে মুনাযারায় অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানান। ব্যস্ততা সত্ত্বেও জুনাগড়ী তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১৩৪২ হিজরীর ৪ঠা রবীউল আউয়াল শুক্রবার সন্ধ্যায় উক্ত গ্রামে পৌঁছেন। মুনাযারা দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আগত জনসমুদ্র অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। ওখানে আগে থেকেই মোল্লা মুলতানী সদলবলে উপস্থিত ছিলেন। বাহাছের বিষয় নির্ধারণ করা হয় ‘গায়রুল্লাহর নামে নযর-নিয়ায পেশ করা ও মানত মানা জায়েয, না নাজায়েয’। তাছাড়া শুধু বড়পীর আব্দুল কাদের জীলানীর নামে বানোয়াট অযীফা পড়াও বাহাছের বিষয় ছিল। জুনাগড়ীর সাথে বাহাছ না করার জন্য মোল্লা মুলতানী বিভিন্ন শর্ত আরোপ করেন এবং বলেন যে, আমার শর্তগুলি মানার পরেই মুনাযারা হবে। জুনাগড়ী তার সকল শর্ত মেনে নেন। তখন মুলতানী রাগতঃস্বরে বলেন, ‘গায়ের মুক্বাল্লিদরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ। কেননা এরা তাক্বলীদ করে না। এজন্য প্রথমে আহলেসুন্নাত-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রমাণ করুন! তারপর মাসআলাগুলির উপর আলোচনা হবে’। এক্ষণে জুনাগড়ী আহলেহাদীছদেরকে আহলে সুন্নাত প্রমাণ করার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে গেলেন। মাগরিবের ছালাতের পর থেকে প্রায় রাত ১২-টা পর্যন্ত মুনাযারা চলে। মাওলানা জুনাগড়ী তাঁর ঐতিহাসিক বক্তব্যে বলেন, ‘ইমাম আবু হানীফা ৮০ হিজরীতে, ইমাম মালেক ৯৩, ইমাম শাফেঈ ১৫০ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশ থাকে যে, ৮০ হিজরীর পূর্বেতো এই চারজন সম্মানিত ইমামের মধ্যে কোন একজনের অস্তিত্বও এ পৃথিবীতে ছিল না। আল্লাহর দ্বীন ইসলাম এর পূর্বে পূর্ণাঙ্গ ছিল। তাঁদের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), ছাহাবী ও তাবেঈদের যুগের কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গিয়েছিল। তাঁদেরকে কি আপনারা আহলে সুন্নাত থেকে খারিজ মনে করেন, না আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন? স্বয়ং চার ইমামকেও আহলে সুন্নাত মনে করেন, না তাদেরকেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ মনে করেন? যদি বলেন, সে সকল ছাহাবী, তাবেঈ, ইমাম চতুষ্টয় প্রমুখ আহলে সুন্নাত থেকে খারিজ ছিলেন তবে ভিন্নকথা। আর যদি ঐ সকল সম্মানিত ব্যক্তি আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত থাকেন তাহলে প্রমাণিত হল যে, আহলে সুন্নাতের সংজ্ঞায় তাক্বলীদে শাখছী বিবেচ্য নয়। সুতরাং আজও সেই ব্যক্তিই আহলে সুন্নাত হতে পারে যে তাক্বলীদ থেকে মুক্ত। বিশ্ব প্রতিপালক তাঁর নবীর হাতে স্বীয় দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন এবং বলেছেন,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا- ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)।
এই পূর্ণাঙ্গ দ্বীনে কি তাক্বলীদ ছিল? আপনি আজ যেটাকে ফরয ও ওয়াজিব এবং যার অমান্যকারীকে আহলে সুন্নাত ও মুসলমান থেকে খারিজ মনে করেন। একটু ভেবে-চিন্তে উত্তর দিবেন। কারণ আপনি তাক্বলীদকে তাও আবার চার ব্যক্তির তাক্বলীদে শাখছীকে ফরয ও ওয়াজিব মনে করেন। অথচ এই চারজন মহামতি ইমাম আল্লাহর দ্বীন পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাওয়ার এবং রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের যুগ অতিবাহিত হওয়ার পরে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর তাঁদের জন্মের পূর্বে তো কোনভাবেই তাঁদের তাক্বলীদ হতে পারে না। ‘মুক্বাল্লাদ’ বা অনুসৃত ব্যক্তিই যখন নেই, তখন ‘মুক্বাল্লিদ’ (অন্ধ অনুসারী) কিভাবে হবে? আর মুক্বাল্লিদ না থাকলে তাক্বলীদেরই বা অস্তিত্ব কোথায়? কমপক্ষে ৮০ হিজরী পর্যন্ত যখন উক্ত চারজনের কোন একজনেরও তাক্বলীদ ছিল না, তখন ৮০ হিজরীর পরে কে নবুঅত পেয়েছে? আর কোন্ আল্লাহ কোন্ নবীর হাতে কোন্ আসমানী কিতাবের মাধ্যমে তাদের চারজনের মধ্য থেকে একজনের তাক্বলীদকে ফরয করেছেন? যেটা না মানার কারণে আজকে আমাদেরকে আহলে সুন্নাত থেকে খারিজ মনে করা হচ্ছে’। প্রত্যক্ষদর্শী মাওলানা আব্দুল গণী বলেন, ‘আমি ঐ দৃশ্য বর্ণনা করতে পারব না, যা সে সময় দৃশ্যমান হচ্ছিল। জালসায় নীরবতা বিরাজ করছিল। সবাই বাকরুদ্ধ ছিল। মাওলানার গাম্ভীর্যপূর্ণ, প্রাঞ্জল, পরিচ্ছন্ন ও সাবলীল বক্তব্য মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছিল। মোল্লা মুলতানী ঘাবড়িয়ে যান এবং তোতলামি করতে শুরু করেন’।[25]
এভাবে মাওলানা জুনাগড়ী যুক্তি ও দলীলের মাধ্যমে এমন জোরালো ও চমৎকার বক্তব্য দেন যে, মোল্লা মুলতানী তার যুক্তি ও দলীলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। জালসার সভাপতি একটি কাগজে সই করার জন্য উভয়কে আহবান জানান। যেখানে লেখা ছিল, যার কথা কুরআন ও হাদীছের অনুকূলে হবে তা মান্য করা হবে এবং যার কথা কুরআন ও হাদীছের বিপরীত হবে তা পরিত্যাগ করতে হবে। জুনাগড়ী এতে স্বাক্ষর করলেও মুলতানী স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান।[26] এভাবে জুনাগড়ী উক্ত মুনাযারায় বিজয়ী হন এবং জনগণের সামনে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করে দেন।
(ক্রমশঃ)
দিল্লীর নিকটবর্তী মীরাঠ শহরে ১৯৪০ সালে ‘ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ’ বিষয়ে একটি মুনাযারা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী। মাওলানা জুনাগড়ী বিশেষ মুনাযির হিসাবে সেখানে আমন্ত্রিত হন। আলোচনা সমাপ্ত করার পর দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করা জুনাগড়ীর চিরাচরিত অভ্যাস ছিল। তিনি মীরাঠের মুনাযারায়ও বক্তব্য প্রদান করে দ্রুত চলে এসেছিলেন। জালসা শেষ হওয়ার পর বিরোধীরা বলে, মাওলানা ছাহেব দলীলসহ সুন্দর বক্তব্য দিলেন। কিন্তু সূত্র তো উল্লেখ করলেন না। এ প্রেক্ষিতে মাওলানা অমৃতসরী দ্রুত জিপ পাঠিয়ে যরূরী কিতাবাদি সহ তাঁকে হাযির হতে বললেন। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে গ্রন্থ খুলে খন্ড ও পৃষ্ঠা নম্বর সহ দলীল-আদিল্লাহ দেখালেন। এরপর থেকে তিনি বেশীরভাগ লিখিত মুনাযারা করতেন। তিনি রাজকোটে যে ঐতিহাসিক মুনাযারায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁর বিস্তারিত বিবরণ ‘যাফরে মুহাম্মাদী’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।[27] তাছাড়া শী‘আ ইমামিয়া ফিরকার সাথেও তিনি মুনাযারা করেছেন।[28]
[1]. ইমাম খান নওশাহরাবী, তারাজিমে ওলামায়ে হাদীছ হিন্দ (পশ্চিম পাকিস্তান : মারকাযী জমঈয়তে ত্বলাবায়ে আহলেহাদীছ, ২য় সংস্করণ, ১৩৯১ হিঃ/১৯৮১ খৃঃ), পৃঃ ১৭৪; আব্দুর রশীদ ইরাকী, তাযকিরাতুল মুহাম্মাদিইয়ীন (সারগোদা : মাকতাবা ছানাইয়াহ, ২০১২), পৃঃ ৮৩; ড. মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী (রহঃ) : হায়াত ওয়া খিদমাত, উর্দূ অনুবাদ : আব্দুল্লাহ সালাফী মুর্শিদাবাদী (বেনারস : জামে‘আ সালাফিইয়াহ, ১৯৯৫), পৃঃ ১৬।
[2]. T.W. Arnold, The Preaching of Islam (London : Constable and Company Ltd. 2nd edition, 1913), P. 207, Chap. IX, The Spread of Islam In India.
[3]. আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মানী, বুহূছ ওয়া তাহকীকাত, সংকলনে : মুহাম্মাদ উযাইর শামস (বৈরূত : দারুল গারবিল ইসলামী, ১৯৯৫), ১ম খন্ড, পৃঃ ১৮; মুহাম্মাদ রাশেদ শায়খ, আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মান সাওয়ানিহ আওর ইলমী খিদমাত (করাচী : কিরতাস, অক্টোবর ২০১১), পৃঃ ৩৩-৩৪।
[4]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী : হায়াত ওয়া খিদমাত, পৃঃ ১৬-১৭।
[5]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৪।
[6]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ১৭-১৮।
[7]. জুনাগড়ীর একমাত্র জীবিত পুত্র সেলিম মায়মান জুনাগড়ীর প্রদত্ত তথ্য মতে বিশ্ববরেণ্য আরবীবিদ আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মানীর সাথে তিনি দিল্লী গিয়েছিলেন। তথ্য : মাওলানা সেলিম মায়মান জুনাগড়ী (৭৭), মির্জাপুর, বিনোদপুর, মতিহার, রাজশাহী। তাং ১৫.০৯.১৭ইং।
[8]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৪-৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ১৮-১৯।
[9]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ মুক্তাদা আছারী উমারী, তাযকিরাতুল মুনাযিরীন (লাহোর : দারুন নাওয়াদির, ২০০৭), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৭১।
[10]. মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টী, বার্রে ছাগীর মেঁ আহলেহাদীছ কী সারগুযাশত (লাহোর : আল-মাকতাবাতুস সালাফিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ২০১২), পৃঃ ২৭; আব্দুর রশীদ ইরাকী, চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ (লাহোর : নু‘মানী কুতুবখানা, তাবি), পৃঃ ১৫৭; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৯।
[11]. মাওলানা মুহাম্মাদ মুস্তাক্বীম সালাফী, জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী ছিহাফাতী খিদমাত (বেনারস : আল-ইয্যাহ ইউনিভার্সাল, জানুয়ারী ২০১৪), পৃঃ ২৮-২৯; তারাজিম, পৃঃ ১৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৯-৩১।
[12]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৭-২৮, ৩১-৩২।
[13]. আব্দুর রশীদ ইরাকী, বার্রে ছাগীর পাক ওয়া হিন্দ মেঁ ওলামায়ে আহলেহাদীছ কী তাফসীরী খিদমাত (ফায়ছালাবাদ : ছাদেক খলীল ইসলামিক লাইব্রেরী, জুলাই ২০০০), পৃঃ ৪৬।
[14]. তাযকিরাতুল মুনাযিরীন, ১/৩৭৩; মাওলানা কাযী মুহাম্মাদ আসলাম সায়ফ ফিরোযপুরী, তাহরীকে আহলেহাদীছ (লাহোর : মাকতাবা কুদ্দূসিয়াহ, ২০০৫), পৃঃ ৩৮৯।
[15]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৫, ৩৬।
[16]. ঐ, পৃঃ ৩৫-৩৬।
[17]. মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী, ‘খতীবুল হিন্দ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মুহাদ্দিছ জুনাগড়ী (রহঃ)-কে হালাতে যিন্দেগী’, মুহাম্মাদ জুনাগড়ী রচিত খুৎবাতে মুহাম্মাদী-এর ভূমিকা (মুম্বাই : আদ-দারুস সালাফিইয়াহ, নভেম্বর ২০০), পৃঃ ৯।
[18]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ১৫৮-৫৯।
[19]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৭-৩৯।
[20]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৬।
[21]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৯-৪০।
[22]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৬; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৮।
[23]. বুখারী হা/৭৩৫; মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
[24]. তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/৩৭৪-৭৬। গৃহীত : আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১৯১৬ মোতাবেক ২৯শে যিলহজ্জ ১৩২৪ হিঃ, রিপোর্ট : আব্দুল লতীফ খান্ডেলা।
[25]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, মুনাযারায়ে মুহাম্মাদী (দিল্লী : তাবি), পৃঃ ৩-৫।
[26]. ঐ, পৃঃ ২২-২৪।
[27]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৪০।
[28]. ঐ, পৃঃ ২৮।
[2]. T.W. Arnold, The Preaching of Islam (London : Constable and Company Ltd. 2nd edition, 1913), P. 207, Chap. IX, The Spread of Islam In India.
[3]. আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মানী, বুহূছ ওয়া তাহকীকাত, সংকলনে : মুহাম্মাদ উযাইর শামস (বৈরূত : দারুল গারবিল ইসলামী, ১৯৯৫), ১ম খন্ড, পৃঃ ১৮; মুহাম্মাদ রাশেদ শায়খ, আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মান সাওয়ানিহ আওর ইলমী খিদমাত (করাচী : কিরতাস, অক্টোবর ২০১১), পৃঃ ৩৩-৩৪।
[4]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী : হায়াত ওয়া খিদমাত, পৃঃ ১৬-১৭।
[5]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৪।
[6]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ১৭-১৮।
[7]. জুনাগড়ীর একমাত্র জীবিত পুত্র সেলিম মায়মান জুনাগড়ীর প্রদত্ত তথ্য মতে বিশ্ববরেণ্য আরবীবিদ আল্লামা আব্দুল আযীয মায়মানীর সাথে তিনি দিল্লী গিয়েছিলেন। তথ্য : মাওলানা সেলিম মায়মান জুনাগড়ী (৭৭), মির্জাপুর, বিনোদপুর, মতিহার, রাজশাহী। তাং ১৫.০৯.১৭ইং।
[8]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৪-৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ১৮-১৯।
[9]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ মুক্তাদা আছারী উমারী, তাযকিরাতুল মুনাযিরীন (লাহোর : দারুন নাওয়াদির, ২০০৭), ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৭১।
[10]. মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক ভাট্টী, বার্রে ছাগীর মেঁ আহলেহাদীছ কী সারগুযাশত (লাহোর : আল-মাকতাবাতুস সালাফিইয়াহ, ১ম প্রকাশ, ২০১২), পৃঃ ২৭; আব্দুর রশীদ ইরাকী, চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ (লাহোর : নু‘মানী কুতুবখানা, তাবি), পৃঃ ১৫৭; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৯।
[11]. মাওলানা মুহাম্মাদ মুস্তাক্বীম সালাফী, জামা‘আতে আহলেহাদীছ কী ছিহাফাতী খিদমাত (বেনারস : আল-ইয্যাহ ইউনিভার্সাল, জানুয়ারী ২০১৪), পৃঃ ২৮-২৯; তারাজিম, পৃঃ ১৭৫; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৯-৩১।
[12]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৭-২৮, ৩১-৩২।
[13]. আব্দুর রশীদ ইরাকী, বার্রে ছাগীর পাক ওয়া হিন্দ মেঁ ওলামায়ে আহলেহাদীছ কী তাফসীরী খিদমাত (ফায়ছালাবাদ : ছাদেক খলীল ইসলামিক লাইব্রেরী, জুলাই ২০০০), পৃঃ ৪৬।
[14]. তাযকিরাতুল মুনাযিরীন, ১/৩৭৩; মাওলানা কাযী মুহাম্মাদ আসলাম সায়ফ ফিরোযপুরী, তাহরীকে আহলেহাদীছ (লাহোর : মাকতাবা কুদ্দূসিয়াহ, ২০০৫), পৃঃ ৩৮৯।
[15]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৫, ৩৬।
[16]. ঐ, পৃঃ ৩৫-৩৬।
[17]. মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী, ‘খতীবুল হিন্দ হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মুহাদ্দিছ জুনাগড়ী (রহঃ)-কে হালাতে যিন্দেগী’, মুহাম্মাদ জুনাগড়ী রচিত খুৎবাতে মুহাম্মাদী-এর ভূমিকা (মুম্বাই : আদ-দারুস সালাফিইয়াহ, নভেম্বর ২০০), পৃঃ ৯।
[18]. চালীস ওলামায়ে আহলেহাদীছ, পৃঃ ১৫৮-৫৯।
[19]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৭-৩৯।
[20]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৬।
[21]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৩৯-৪০।
[22]. তারাজিম, পৃঃ ১৭৬; মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ২৮।
[23]. বুখারী হা/৭৩৫; মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
[24]. তাযকিরাতুল মুনাযিরীন ১/৩৭৪-৭৬। গৃহীত : আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১৯১৬ মোতাবেক ২৯শে যিলহজ্জ ১৩২৪ হিঃ, রিপোর্ট : আব্দুল লতীফ খান্ডেলা।
[25]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, মুনাযারায়ে মুহাম্মাদী (দিল্লী : তাবি), পৃঃ ৩-৫।
[26]. ঐ, পৃঃ ২২-২৪।
[27]. মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী, পৃঃ ৪০।
[28]. ঐ, পৃঃ ২৮।