সালাফে সালেহিন কাদের বলা হয় ?

Admin
Author

Admin

Administrator
SalafiBook
Joined
May 29, 2025
Messages
135
Reaction score
0
সালাফে সালেহীন বলতে ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্মের মুসলমানদের বোঝায়, যাদের মধ্যে রয়েছে সাহাবা (নবীর সহচর), তাবেয়ীন (যিনি সাহাবীদের থেকে দ্বীন শিখেছেন), এবং তাবে-তাবেয়ীন (যিনি তাবেয়ীদের থেকে দ্বীন শিখেছেন)। এই তিনটি প্রজন্মকে ইসলামের ইতিহাসে "শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম" হিসেবে ধরা হয় এবং তাদের পথ অনুসরণ করা মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ

হিসেবে
সালাফে সালেহিন’ অর্থ: পুণ্যবান পূর্বসূরি। আর সালাফে সালেহিন বা সালাফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইসলামের প্রথম তিন শতাব্দীর ঐ সকল পুণ্যবান ব্যক্তিবর্গ যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই উম্মতের ‘শ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। যেমন: বুখারি ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে মুতাওয়াতির সূত্রে একদল সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ، ثُمَّ الَّذيِنَ يَلُونَهُمْ ، ثُمَّ الَّذيِنَ يَلُونَهُمْ
“সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হল, আমার যুগের মানুষ অত:পর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ অত:পর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ।” [বুখারি ও মুসলিম]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইমরান ইবনে হুসাইন রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِينَ بُعِثْتُ فِيهِمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، وَاللَّهُ أَعْلَمُ أَذَكَرَ الثَّالِثَ أَمْ لَا، ثُمَّ يَظْهَرُ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ، وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَنْذِرُونَ، وَلَا يُوفُونَ، وَيَخُونُونَ، وَلَا يُؤْتَمَنُونَ، وَيَفْشُو فِيهِمُ السِّمَنُ
“আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হল তারা যাদের মধ্যে আমি প্রেরিত হয়েছি। অতঃপর যারা তাদের সঙ্গে সংলগ্ন। আল্লাহই ভালো জানেন যে, তিনি তৃতীয় স্তরটি উল্লেখ করেছেন কি না। তারপর এমন সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা সাক্ষী হিসেবে তাদেরকে না ডাকা হলেও সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করে তা পূর্ণ করবে না, তারা খিয়ানত করবে; আমানত রক্ষা করবে না। আর তাদের মধ্যে মেদ-ভুঁড়ি প্রকাশ পাবে।” [সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: ৩৫/ সুন্নাহ, পরিচ্ছেদ: ১০. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণের মর্যাদা]
এই তিন যুগের পূণ্যবান মানুষদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ’ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। ‌আর সালাফিগণ এই পূর্বসূরিদের সাথে সম্পৃক্ত।

➤ শাইখ আলাবানি রাহ. বলেন,

“মুসলিম বিশ্বে বর্তমানে বিভিন্ন জামায়াত বা দলের মত সালাফি আন্দোলন কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির সাথে সম্পৃক্ত নয়। বরং এই সম্পৃক্ততা হল, পবিত্র ও নিষ্কলুষ একটি আদর্শের সাথে। কারণ পূর্বসূরিগণ সম্মিলিতভাবে গোমরাহির উপর থাকবেন-এটা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে পরবর্তী যুগের মানুষের ব্যাপারে শরিয়তে প্রশংসা বর্ণিত হয় নি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিন্দাবাদ বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি পূর্বোক্ত হাদিসের শেষাংশে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইঙ্গিত করে বলেছেন,

ثُمَّ يأتي مِن بعدِهِم أقوامٌ يَشْهَدُون ولا يُسْتَشْهَدُون إلى آخر الحديث
“এরপর তাদের পরে এমন সব মানুষের আবির্ভাব ঘটবে যারা সাক্ষ্য দিবে কিন্তু তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হবে না…।”
তিনি অন্য আরেক হাদিসেও এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। উক্ত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, তিনি সেখানে মুসলিমদের একটি দলের প্রশংসা এবং ‘অধিকাংশ’ লোকের নিন্দা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ عَلَى الْحَقِّ ِ لَا يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ أَوْ حَتّى تَقُوْمَ السَّاعَة
“আমার উম্মতের একটি দল সত্যের উপর বিজয়ী থাকবে। বিরোধিতা কারীরা আল্লাহর হুকুম আসা পর্যন্ত তথা কিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।” এই হাদিসে শেষ জামানার একটি দলের বিশেষভাবে প্রশংসা করা হয়েছে। আরবি طَائِفَةٌ শব্দের মানে হল, একটি ছোট জামায়াত বা দল। আভিধানিক অর্থে এক বা একাধিক ব্যক্তি বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
অত:এব যখন আমরা সালাফিয়াতের অর্থ জানলাম, আরও জানলাম যে সালাফিগণ পূর্বসূরিদের সাথে সম্পৃক্ত এবং কোন মুসলিম যদি এই পূর্বসূরিদের আদর্শকে গ্রহণ করে তবে সেটাই সব চেয়ে নিরাপদ তখন কোন ব্যক্তি সালাফি ছাড়া অন্য অন্য কিছু হতে পারে না; সম্ভব নয়। কারণ, সালাফিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ হল এক নিরাপদ, নিষ্কলুষ এবং পবিত্র নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া।”

[সালাফি মতাদর্শ কী? আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানি রহ.]

সালাফি আকিদার ভিত্তি হল, সাহাবি, তাবেয়ি ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারী পূর্ববর্তী আহলে ইলমদের বুঝ ও ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ করা এবং এই দুটো জিনিসকে আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি, আচার-আচরণ, খাদ্য-পোশাক, নীতি-নৈতিকতা, রাজনীতি, অর্থনীতি তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে অন্য সকল মানুষের মতামত, ফতোয়া, চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের উপর অগ্রাধিকার দেওয়া। সেই সাথে শিরক, বিদআত, অন্ধ অনুকরণ এবং সকল প্রকার অপসংস্কৃতি মূলোৎপাটনে কাজ করা।

▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।
 
Last edited:
Back
Top